ময়মনসিংহ জেলার সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসগুলো দুর্নীতি আর ঘুষের রাজ্যে পরিণত হয়েছে। এখানে দলিল সম্পাদন করতে আসা দাতা গ্রহীতাদেরকে জিম্মি করে প্রকাশ্যেই হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। আর সেই টাকা দিন শেষে সন্ধ্যা বেলায় জেলা রেজিষ্ট্রার অফিসের কোন এক কক্ষে এই ঘুষের টাকা ভাগাভাগী হচ্ছে তাও আবার লোকচক্ষুর আড়ালে নয় একেবারে প্রকাশ্যেই। ফলে ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে এই ঘুষ বানিজ্যের প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করলেও ঘুষ বানিজ্য চলছে প্রকাশ্য আর অভিযোগ পড়ে রয়েছে সবার অন্তরালে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা সাব-রেজিষ্ট্রার মোহছেন মিয়া স্টার বাংলা ২৪ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন-আপনারা জেনে থাকবেন যে, ইতোমধ্যেই জেলার মুক্তাগাছা, ত্রিশাল, গফরগাঁও ও ভালুকাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার সাব-রেজিষ্ট্রারের বিরূদ্ধে নিদ্রিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কাজ চলমান। এরমধ্যে গৌরীপুর সাব-রেজিষ্টারের অফিস সহকারী আম্বিয়া খাতুনকে নিদ্রিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শো-কজ করা হয়েছে। সেখানে ভুক্তভোগীরা গৌরীপুরের সাবেক সাব-রেজিষ্ট্রার শেখ নাছিমুল আরিফ এবং অফিস সহকারী আম্বিয়া খাতুনের বিরূদ্ধে জেলা রেজিষ্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয় একটি সূত্র থেকে জানা গেছে যে, হেবার ঘোষণা, সাফ কাওলা, বন্টননামা ও দানপত্রসহ বিভিন্ন দলিল সম্পাদনের কাজে দাতা গ্রহীতিরা আসেন সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসগুলোতে আর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সাব-রেজিষ্ট্রারসহ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ফাঁদে ফেলে দাতগ্রহীতাদের কাছ থেকে আদায় করছে নিজেদের তৈরী করা ঘুষের টাকা। তবে বরাবরের মত এটিও হচ্ছে লোকচক্ষুর সামনেই। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এগুলো অনিয়ম দেখার কেউ নেই। আর থাকলেও হয়তো তাদের মুখও রয়েছে বন্ধ সেই ঘুষের টাকার বদলে।
সরোজমিনে তদন্ত করে দেখা গেছে যে, জেলার প্রতিটি সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস সহকারীরা প্রতিটি দলিলের বিপরীতে নির্ধারিত ফি ছাড়াও আদায় করছে বাড়তি টাকা। অফিস খরচের কথা বলে আদায় করা হচ্ছে এইসব ঘুষের টাকা। দেখা গেছে যে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সবকিছু ঠিক থাকলেও তাদের অফিস সেরেস্তার টাকা কোন অবস্থাতেও মওকুফ নেই। আর যদি কোন অবস্থাতে কাগজপত্রে একটু ব্যতিক্রম দেখা দিল তাহলে আর রক্ষা নাই। সেই ক্ষেত্রে শুরু হয়ে যায় দর কষাকষি। আর এই ক্ষেত্রে অফিস সেরেস্তার খরচ নির্ধারন করে দেন সাব-রেজিষ্ট্রার খোদ নিজে।
যেমন-গৌরীপুরে ৩ লক্ষ টাকার সাব কাওলা দলিল সম্পাদনে সেরেস্তা খরচ ৩৮শত টাকা আর খারিজ ছাড়া দলিল মূলে ৫০ হাজার টাকা মূল্যের দানপত্র দলিলের সেরেস্তা খরচ ২২শত টাকা। হেবা ঘোষণায় ৫ লক্ষ টাকার মধ্যে প্রতি লাখে ৪শত টাকা ছাড়াও সেরেস্তা খরচ ৩৮শত টাকা। ৩ লক্ষ টাকার বন্টননামা দলিলের সেরেস্তা খরচ ৩৮শত টাকা আর যদি ৩ লাখের উপরে হয় তবে লাখ প্রতি সেরেস্তা লাগবে ৩শত টাকা। আর এইভাবে আদায় করা ঘুষের টাকা যাচ্ছে আইজিআর এবং ডিআরসহ বিভিন্ন দপ্তরে। এরমধ্যে সাব-রেজিষ্ট্রারের পকেটে যায় ৫৪ শতাংশ, অফিস সহকারী পাচ্ছে ৩০ শতাংশ আর বাকী ২০ শতাংশ পাচ্ছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল।